অল্প পুঁজিতে চুলের ব্যবসা করতে পারেন - ব্যবসায়ী আইডিয়া

বিজ্ঞাপন

LightBlog

New

Post Top Ad

Monday, November 9, 2015

অল্প পুঁজিতে চুলের ব্যবসা করতে পারেন


মানুষের মাথার চুল কেটে সাধারণত ফেলেই দেওয়া হতো এক সময়। কিন্তু তখন কে ভেবেছে এই ফেলে দেওয়া চুল বিদেশে রফতানি করেই দেশ আয় করবে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। বাংলাদেশ এখন প্রতিবছর যে ৭০ থেকে ৭৫ প্রকার পণ্য বিদেশে রফতানি করছে তার মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে ফেলে দেওয়া চুল। চুল রফতানি করেই প্রতিবছর আয় হচ্ছে অর্ধশত কোটি টাকারও বেশি। আর অপ্রচলিত পণ্য হিসেবে এ খাতের রফতানি প্রবৃদ্ধি বাড়ছে প্রায় ২০০ শতাংশ।
এই ফেলে দেওয়া চুলকে ঘিরে দেশে এখন গড়ে উঠেছে কয়েকশ’ শিল্প প্রতিষ্ঠান। হাজার হাজার লোক নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করছে ফেলনা চুলকে কেন্দ্র করে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা, বিশেষ করে ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, মাগুরা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, মাদারীপুর ও উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর, রংপুরসহ অনেক জেলাতেই গড়ে উঠেছে চুল শিল্প। তবে উত্তরাঞ্চলের চুলের ব্যবসার মূল কেন্দ্র হচ্ছে সৈয়দপুর। কেবল ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা জেলাতেই গড়ে উঠেছে তিন শতাধিক চুল প্রক্রিয়াকরণ কারখানা। এসব এলাকা থেকে চুল সংগ্রহ করে সেগুলোকে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে রফতানি করা হচ্ছে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)  সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর চুল রফতানির প্রবৃদ্ধি ঘটছে ব্যাপক হারে। ইপিবি সূত্র জানায়, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে চুল রফতানি হয় মাত্র ৬ কোটি ৬৪ লাখ ২০ হাজার টাকার। পরের বছর অর্থাৎ ২০০৯-১০ অর্থবছরে বেড়ে হয় ৮ কোটি ৪৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে চুল রফতানি দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে হয় ১৭ কোটি ৩৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা। পরের বছর অর্থাত্ ২০১১-১২ অর্থবছরে এসে চুল রফতানিতে প্রবৃদ্ধি ঘটে ২১৮ শতাংশ। এ বছর বাংলাদেশ থেকে চুল রফতানি হয় ৫৫ কোটি ৪৩ লাখ ২০ হাজার টাকার। আর চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরে চুল রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ কোটি ৮৫ লাখ ২০ হাজার টাকার। এই বছরের প্রথম দু’মাসে অর্থাৎ জুলাই-আগস্ট মাসে চুল রফতানি হয়েছে ৯ কোটি ৯২ লাখ টাকার
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে বছরে অর্ধশত কোটি টাকার যে চুল রফতানি হচ্ছে তার সিংহভাগই আসছে ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও যশোর জেলা থেকে। এই তিন জেলাতে ফেলে দেওয়া চুলকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে কয়েকশ’ কারখানা।
কিছু উল্লেখযোগ্য কেস স্টাডি
চুল এখন জীবিকার উৎস
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল কার্পাসডাঙ্গার পল্লীতে গড়ে উঠেছে শতাধিক চুল প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র। মেয়েদের মাথার আঁচড়ানো পরিত্যক্ত চুলের ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হয়েছে এখানকার শতাধিক বেকার যুবক যুবতি। আর চুল প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে কাজ করে বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজে পেয়েছে প্রতিবন্ধীসহ ৮ হাজার নারী-পুরুষ। উপজেলার বিভিন্ন বয়সের মানুষ স্থানীয়ভাবে ও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মেয়েদের মাথার পরিত্যক্ত চুল সংগ্রহ করে এসব কেন্দ্রে বিক্রি করে। ক্রয়কৃত এসব চুল বিশেষ ব্যবস্থায় প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি করা হয় বিদেশি ক্রেতাদের কাছে। প্রায় এক যুগ আগে থেকেই চুয়াডাঙ্গা ও যশোরের সীমান্ত এলাকায় পরিত্যক্ত চুল কেনাবেচা শুরু হয়। এ সময় একশ্রেণীর দালাল পরিত্যক্ত চুল সংগ্রহ করে চোরাপথে ভারতে পাচার করত। চুল সংগ্রহের কাজে তারা ফেরিওয়ালাদের ব্যবহার করত। ফেরিওয়ালারা ক্লিপ, চিরুনি, কাঁটা, ফিতা, কাচের চুড়ি, বেলুন, আইসক্রিম, বাদামভাজা ও বাচ্চাদের নানারকম খেলনার বিনিময়ে শহর এবং গ্রামের বাড়িতে গিয়ে এসব পরিত্যক্ত চুল সংগ্রহ করে চোরাকারবারি দালালদের কাছে বিক্রি করত। এসব দালাল সে সময় সীমান্ত পথে ভারতে চুল পাচার করে রাতারাতি প্রচুর টাকার মালিক হয়ে যায়। ফলে দ্রুত বিস্তৃতি ঘটতে থাকে এ ব্যবসার। বিষয়টি ব্যাপক আকার ধারন করলে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে চুলসহ অনেকেই ধরা পড়ে। পরে দালালদের হাত থেকে এই ব্যবসা চলে আসে সাধারণ মানুষের হাতে। এ সময় চুল ব্যবসায়ীরা চীন, জাপান, কোরিয়া ও মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশের ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বাংলাদেশ থেকে চুল কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করে। পরে তারা বাংলাদেশে এসে ভালো দাম দিয়ে এ চুল কিনতে শুরু করে। তখন থেকেই চোরাপথে ভারতে চুল পাচার বন্ধ হয়ে যায়। বৈধভাবে এ ব্যবসা শুরু হওয়ায় নতুন করে পরিধি বাড়তে থাকে চুল ব্যবসার। কুতুবপুর গ্রামের চুল ব্যবসায়ী ঝন্টু জানায়, তার কোনো জায়গাজমি ছিল না। লেখাপড়াও শিখতে পারেনি। ভ্যান চালিয়ে ও পরের জমিতে মজুর খেটে কোনোরকমে চলত তার সংসার। বছর দশেক আগে জীবনজীবিকার তাগিদে ঢাকা শহরে গিয়ে রিকশা চালাতে শুরু করে। একদিন ঢাকায় দামুড়হুদার চন্দ্রবাস গ্রামের ওসমানের সঙ্গে পরিচয় হয়। তার কাছ থেকে জানতে পারে সে ঢাকায় চুল কিনতে এসেছে। ঢাকা থেকে এ চুল কিনে চোরাইপথে কুতুবপুর সীমান্তপথে ভারতে পাচার করে। লাভ হয় ভালো। ঝন্টু তখন ওসমানকে বেশ কয়েক চালান এ চুল কিনতে সাহায্য করে। এরই একপর্যায়ে ঝন্টু জানতে পারে, বিদেশ থেকে ক্রেতারা এসে ঢাকা থেকে এ চুল কিনে নিয়ে যায়। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে একসময় সে সফল হয়। ঝন্টু তখন তার কাছে গচ্ছিত স্বল্প কিছু পুঁজি নিয়ে লেগে যায় এ কাজে। ২০০৭ সালে ঢাকার মিরপুরে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে গড়ে তোলে চুল প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র । এ কেন্দ্রে বর্তমানে ৬০ জন লোক কাজ করে। তাদের মধ্যে ৮ জন প্রতিবন্ধীও রয়েছে। গত মার্চ মাসে ঝন্টু কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি কুতুবপুরে একটি চুল প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র চালু করেছে। এখানে ১৫০ জন নারী-পুরুষ কাজ করছে। পরিত্যক্ত চুল প্রক্রিয়াজাত করার ফলে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ হয় না, অন্যদিকে আর্থিক লাভবান হচ্ছে চুল ব্যবসায়ীরা। কীভাবে পরিত্যক্ত চুল প্রক্রিয়াজাত করা হয় জানতে চাইলে ঝন্টু জানান, প্রথমে জট পাকানো পরিত্যক্ত এ চুল কিনে এনে সুচ বা কাঁটা দিয়ে জট ছাড়ানো হয়। এরপর হুইল পাউডার ও পরে শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে রোদে শুকানো হয় এবং দৈর্ঘ্য অনুযায়ী প্যাকিং করা হয়। সর্বনিম্ন ৮ ইঞ্চি থেকে শুরু করে ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্ব চুল বিক্রি হয়। ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত প্রতি কেজি চুল বিক্রি হয় ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা। এভাবে প্রতি ২ ইঞ্চি বেশি দৈর্ঘ্যরে চুল প্রতি কেজি ২ হাজার টাকা বেশি দরে বিক্রি হয়। এভাবে ২৮ থেকে ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত প্রতি কেজি চুল বিক্রি হয় ১৫-২০ হাজার টাকায়। চন্দ্রবাস গ্রামের আবদুস সাত্তার জানান, সে আগে অন্যের জমি লিজ নিয়ে চাষাবাদ করত। অন্যের দেখাদেখি ২০০৯ সালের জুন মাসের দিকে সে নিজ বাড়িতে চুল প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র গড়ে তোলে। বর্তমানে এখানে ২০-২৫ জন নারী-পুরুষ কাজ করছে। এ কাজে প্রতিমাসে তার খরচ বাদ দিয়ে ১০-১২ হাজার টাকা লাভ হয়।  ঝন্টু ও সাত্তারের দেখাদেখি উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা গ্রামের সাইফুল, মামুন, আবদুস সাত্তার, মিদ্দার, আবুল, কুতুবপুর গ্রামের আমির, আমিনুল, সাইফুল, রশিদ, হুদাপাড়া গ্রামের কাশেদ আলী, মিনা, শামসুলসহ আনেকই এখন এ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া উপজেলার চন্দ্রবাস, ছাতিয়ানতলা, শিবনগর, কানাইডাঙ্গা, কাঞ্চনতলা, বাঘাডাঙ্গা, কুড়ালগাছি, আরামডাঙ্গা, জাহাজপোতা, পীরপুরকুল্লা, চয়রা, হুদাপাড়া, মদনাসহ ২৫-৩০টি গ্রামে গড়ে উঠেছে চুল প্রক্রিয়াজা কেন্দ্র।  এদিকে এসব চুল প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্রে কাজ করে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও স্বাবলম্বী হচ্ছে। ছাতিয়ানতলার নারী শ্রমিক মোসলেমা জানায়, সে কারখানা থেকে প্রতিদিন ২০০-২৫০ টাকা আয় করে। মোসলেমার মতো অনেকেই এখানে কাজ করছে। চুল ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এ পরিত্যক্ত চুল কিনে আনতে পথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও বখাটে যুবকরা নানাভাবে হয়রানি করে থাকে। কার্পাসডাঙ্গা চুল প্রক্রিয়াজাত সমিতির সভাপতি সহিদ বিশ্বাস জানান, বর্তমানে চীন, কোরিয়া, মিয়ানমারসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে বৈধ পথেই এসব চুল কিনে নিয়ে যাচ্ছে। বিদেশে এসব চুল ক্যাপ তৈরি ও টাক মাথায় হেয়ার প্ল্যান্টেশনসহ আরও নানা কাজে ব্যবহৃত হয়।

মেয়েদের মাথার ঝরে পড়া চুল বিক্রি হচ্ছে কোটি টাকায়
ঝিনাইদহে মেয়েদের মাথার ঝরে যাওয়া চুল বিক্রি হচ্ছে কোটি টাকায়, যাচ্ছে বিদেশে। এ জেলায় বছরে প্রায় ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার চুল বাণিজ্য হয়। আগে এ চুল ফেলে দেয়া হতো। এখন রফতানি হচ্ছে বিদেশে। চুল বিক্রি ও কারখানায় কাজ করে সংসার চালাচ্ছে শত শত মানুষ। বর্তমানে মেয়েরা চুল আঁচড়ানোর সময় ঝরে পড়া চুল যতনো করে গুটি জমা করে রাখে। হকাররা বাড়ি বাড়ি ঘুরে এ চুল প্রতিকেজি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা দরে কিনে নিয়ে যায়। ঠিক যেন এক অবিশ্বাস্য ঘটনা কিন্তু সবই সত্য। চুল সংগ্রহ ও বেচাকেনাকে কেন্দ্র করে ঝিনাইদহে গড়ে উঠেছে বেশকিছু কারখানা। ঝিনাইদহ শহরের মডার্নপাড়া, আরাপপুর, যাটবাড়িয়া ও স্বর্ণপট্টিসহ বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠেছে চুলের ব্যবসা কেন্দ্র। চীনসহ বিভিন্ন দেশে এই চুলের অনেক কদর, যা থেকে সরকারও পাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব।

ঝিনাইদহ শহরের যাটবাড়িয়ায় কিছু বাসা বাড়িতে গড়ে উঠেছে কুড়ানো চুলের জট ছাড়ানোর কারখানা। একদিন যারা ছেলেমেয়েদের মুখে ঠিকমতো খাবার তুলে দিতে পারতেন না, এখন তাদের অনেকেই কুড়িয়ে পাওয়া এসব চুল বিক্রি করে সংসার চলাচ্ছেন। ঋষি নারীরা ব্যস্ত, তারা কাজ করছেন চুলের কারখানায়। তাদের গ্রামেই গড়ে উঠেছে এই বিশাল কারখানা, যেখানে ফেলে দেয়া ও বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা জটবাঁধা চুলের জট ছাড়ানো হয়। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কারখানায় কাজ করেন শ্রমিকরা। ঋষি সম্প্রদায়ের নারীরা জানান, আগে স্বামীর অভাবের সংসারে কিছুই করার ছিল না তাদের। আজ তারা কাজ পেয়েছেন, নিজেরা আয় করছেন। কুড়ানো চুল কেনার পর শ্যাম্পু ও সাবান দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়। এরপর মেয়েরা সেই চুল বাড়িতে নিয়ে পরিপাটি করে। দৈর্ঘ অনুযায়ী চুল বাছাই করা হয়। এরপর আঁটি তৈরি করে ঢাকায় পাঠানো হয়। শত শত নারী-পুরুষ এ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তারা অভাবকে না বলে দিয়েছেন।

দু’রকম চুল রফতানি হয়ে থাকে। কেনার পর প্রসেস ছাড়া গুটি করা চুল রফতানি করা হয়, আবার প্রসেস করা চুল রফতানি করা হয়। চুলের দৈর্ঘ অনুযায়ী গ্রেড করা হয়। প্রসেস করে থাকে সাধারণত দরিদ্র ঘরের মেয়েরা। তারা একশ’ গ্রাম চুল প্রসেস করে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পেয়ে থাকেন। প্রসেস করা চুল গ্রেড অনুয়ায়ী ভাগ করা হয়। এক কেজি কুড়ানো চুল প্রসেস করলে ৬শ’ থেকে ৭শ’ গ্রাম টেকে। প্রসেস করা চুল প্রতিকেজি ৭ হাজার থেকে শুরু করে ১৪ হাজার টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি করা হয়। তবে প্রতিকেজি চুল কত ডলার মূল্যে রফতানি হয় তা বলতে পারেন না দেশীয় চুল ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, বিদেশে বাংলাদেশের চুলের চাহিদা বেশি। চীনারা দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে চুল কিনে বিভিন্ন দেশে রফতানি করে থাকেন। দেশীয় চুল ব্যবসায়ীদের কাছে এ তথ্য জানা গেল।

চুলের কারখানায় কর্মরত প্রিয়সী দাস ও সোনামণি দাস জানান, এখন প্রতিদিনের পয়সা প্রতিদিন পাচ্ছেন। এতে কিছুটা সংসার চালাতে পারছেন। তবে তাদের মজুরিটা অনেক কম বলে দাবি করেন। একই পাড়ার রূপসী দাস জানায়, স্কুলে ক্লাসের ফাঁকে এখানে কাজ করে সেও দিনে ৮০-১০০ টাকা আয় করে। তার মতো অনেক শিক্ষার্থী পড়ালেখার পাশাপাশি এই কাজ করছে। তারা আরও জানান, এ কাজে পারিশ্রমিক খুব কম। সারাদিন খাটুনির পর তাদের ১৩০-১৫০ টাকা মজুরি দেয়া হয়। তার পরও তারা খুশি।
কুড়ানো চুল ক্রেতা হযরত আলী ও নওশাদ আলী বললেন, এর আগে তারা দিনমজুরের কাজ করতেন। এখন গ্রামগঞ্জ থেকে হকারি করে এই চুল কিনে তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন। সংসারও চলছে ভাল।
নারীদের মাথা চিরুনি করার পর যে চুল চিরুনিতে আটকে যায় সেই চুল তারা হকারের মাধ্যমে ক্রয় করে থাকেন। এরপর ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা কেজি দরে এই চুল ক্রয় করেন। জট ছাড়ানোর পর দ্বিগুণ দরে বিক্রি হয়। ১২ ইঞ্চির উপরে যত লম্বা হবে তত বেশি দামে বিক্রি হয়। এই চুল দিয়ে নানা ধরনের পণ্য তৈরি করা হয়। চুল ব্যবসায়ী মান্দার আলী জানালেন, বিদেশীদের এই চুল কেনা সম্পর্কে আমরা ঘোর অন্ধকারে। বিদেশীরা যা বোঝায় আমরা তাই বুঝি। এছাড়া বিদেশে এসব চুলের বাজার সম্পর্কেও আমরা কিছুই জানি না। তারা আমাদের যখন যে দাম দেয় আমাদের সেই দামই নিতে হয়। এছাড়া চুল ছাড়ানোর কোন মেশিন না থাকায় শুধু হাতে চুল ছাড়াতে সময় ও পরিশ্রম বেশি হয়। এছাড়াও অনেক চুল নষ্ট হয়ে যায়। সরকারী বা বেসরকারীভাবে চুলের ব্যবসা সম্পর্কে ট্রেনিং বা কর্মশালার ব্যবস্থা করলে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা আরও দক্ষ ও উৎসাহী হবে বলে মনে করেন তিনি।

ঝিনাইদহের সবচেয়ে বড় চুল ব্যবসায়ী আতিয়ার রহমান জানালেন, চুল ব্যবসা মূলত চীনারা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এছাড়াও মিয়ানমার, জাপান ও কোরিয়ার ব্যবসায়ীরা চুল কিনে রফতানি করে। সরাসরি বিমানে বেশিরভাগ চুল রফতানি হয়। টেকনাফ বন্দর দিয়ে মিয়ানমারে চুল রফতানি হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের চুলের ভাল কদর। তিনি নিজে চীনে গিয়ে দেখে এসেছেন এ চুল দিয়ে বিভিন্ন ফ্যাশনের পরচুলা তৈরি করে চীনারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি করে থাকে। এ পরচুলা নানান রংয়ের তৈরি করে তারা। ইউরোপের দেশগুলো ও আমেরিকাতে রফতানি হয়। কোরিয়া ও মায়ানমার থেকেও পরচুলা রফতানি হয়ে থাকে।

ঝিনাইদহ জেলা থেকে প্রতিমাসে প্রায় ২০-২৫ হাজার কেজি চুল বিদেশে রফতানি হয়। অর্থাৎ বছরে প্রায় ২০-২৫ কোটি টাকার চুল কেনাবেচা হয়ে থাকে বলে তিনি জানান। এসব কুড়ানো চুলের জট ছাড়ানো শ্রমিকদের উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রসেস করা চুল দেশীয় কোন কোম্পানির মাধ্যমে বিদেশে রফতানি করতে পারলে সরকার আরও বেশি রাজস্ব পাবে বলে মনে করেন অভিজ্ঞরা।
তথ্য: 
তথ্য আপা

No comments:

Post a Comment

Thanks For Your Message
এবিসি মেশিনারি লিমিটেড।
Call: 01977886660, 01758631813
মেশিন কেনার জন্য - http://www.abcshopbd.com/

অন্যান্য বিষয় খুজুন-

Post Top Ad