অল্প টাকায় ফলের দোকান দিতে পারেন - ব্যবসায়ী আইডিয়া

বিজ্ঞাপন

LightBlog

New

Post Top Ad

Monday, November 9, 2015

অল্প টাকায় ফলের দোকান দিতে পারেন

আমাদের দেশে বেশ কিছু মৌসুমী ফল পাওয়া যায়। যেমন: আম, লিচু, কাঁঠাল, আনারস, জলপাই, কামরাঙ্গা ইত্যাদি। এসব মৌসুমি ফলে প্রচুর ভিটামিন পাওয়া যায়। এসব মৌসুমি ফলের পাশাপাশি সারাবছর যে সব ফল পাওয়া যায় সেসব ফলের প্রচুর চাহিদা থাকে। এসব ফল বিক্রি করে আয় করা সম্ভব। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশনের কাছে বা হাসপাতালের সামনে ফলের দোকান দিলে ব্যবসা ভালো চলবে। এছাড়া আবাসিক এলাকায় মুদি দোকানের কাছে ফলের দোকান দেয়া যেতে পারে।
আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরণের ফল জন্মে। যেমন- আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, লিচু, পেয়ারা, কমলা ইত্যাদি। এছাড়া অনেক ফল বিদেশ থেকে আমদানী করা হয়। যেমন- আপেল, নাসপাতি, মালটা, আঙ্গুর ইত্যাদি। ফল সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। ছোট বড় সবার কাছেই বিভিন্ন রকম ফল প্রিয়। তাই আমাদের দেশের শহর গ্রাম সবখানেই ফলের দোকান দেখা যায়। যেকোন ব্যক্তি নিজের কর্মসংস্থানের জন্য ফলের ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
স্থান নির্বাচন
ফলের দোকান দেবার জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করতে হবে। বাজারের কেন্দ্র বা যে সব স্থানে লোক সমাগম হয় সে রকম স্থানে ফলের দোকান দিতে হবে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশনের কাছে বা হাসপাতালের সামনে ফলের দোকান দিলে ব্যবসা ভালো চলবে। এছাড়া আবাসিক এলাকায় মুদি দোকানের কাছে ফলের দোকান দেয়া যেতে পারে।
বাজার সম্ভাবনা
নানান রকম ফলের চাহিদা সারাবছরই থাকে। ফল হচ্ছে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার। ছোট বড় সবাই কোন না কোন ফল পছন্দ করে। আমাদের দেশে বেশ কিছু মৌসুমী ফল পাওয়া যায়। যেমন- আম, লিচু, কাঁঠাল, আনারস, জলপাই, কামরাঙ্গা ইত্যাদি। এসব মৌসুমী ফলে প্রচুর ভিটামিন পাওয়া যায়। এসব মৌসুমী ফলের পাশাপাশি সারাবছর যে সব ফল পাওয়া যায় সেসব ফলের প্রচুর চাহিদা থাকে। এসব ফল বিক্রি করে আয় করা সম্ভব।
মূলধন
ফলের দোকান দেবার জন্য স্থায়ী উপকরণ কিনতে ১২৬০-১৫৭০ টাকার প্রয়োজন হবে। এছাড়া প্রতি সপ্তাহে ফল কেনার জন্য ৫০০০-৬০০০ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। দোকান ঘর ভাড়া নিতে চাইলে দোকান ঘরের পজিশন ও ভাড়া বাবদ আরও কিছু টাকার প্রয়োজন হবে। যদি ব্যক্তিগত পুঁজি না থাকে তাহলে মূলধন সংগ্রহের জন্য নিকট আত্মীয়স্বজন, ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও)-এর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এসব সরকারি, বেসরকারি ব্যংক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) শর্ত সাপেক্ষে ঋন দিয়ে থাকে।
প্রশিক্ষণ
ফলের দোকান দেবার জন্য তেমন কোন প্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই। তবে অভিজ্ঞ কারোও সাথে যোগাযোগ করে ফলের ব্যবসা সংক্রান্ত খুঁটিনাটি জানা যাবে।
প্রয়োজনীয় উপকরণপরিমাণমূল্য ও প্রাপ্তিস্থান
স্থায়ী উপকরণ 
উপকরণ
পরিমাণ
আনুমানিক মূল্য (টাকা)
প্রাপ্তিস্থান
কাঠের শেলফ্ বা তাক
২টি
৫০০-৬০০
আসবাবপত্রের দোকান
ঝুড়ি
৪টি
৮০-১০০
বাঁশের দ্রব্যের দোকান
নিচু টেবিল
১টি
৩০০-৪৫০
আসবাবপত্রের দোকান
দাঁড়িপাল্লা ও বাটখারা
১ সেট
২০০-২২০
হার্ডওয়ারের দোকান
কাগজের ঠোঙ্গা
৫০টি
১৮০-২০০
মুদি দোকান
মোট= ১২৬০-১৫৭০ টাকা
প্রতি সপ্তাহে ফল কেনার জন্য ৫০০০-৬০০০ টাকা বিনিয়োগ করার প্রয়োজন হবে।
ফলের দোকান পরিচালনার নিয়ম
  • দোকান নির্বাচনের পর দোকানে কাঠের শেলফ্ বা তাকগুলো দেয়াল ঘেঁষে সাজিয়ে নিতে হবে।
  • দোকানের সামনের দিকে কাঠের টেবিল রাখতে হবে।
  • যে সব স্থানে পাইকারী মূল্যে টাটকা ও প্রাকৃতিক উপায়ে পাকা ফল বিক্রি করে সেখান থেকে ফল সংগ্রহ করতে হবে।
  • কাঠের শেলফ্ বা তাকে বিভিন্ন ফল একটার উপর আরেকটা রেখে সাজাতে হবে। এভাবে আপেল, কমলা, নাসপাতি, মালটা ইত্যাদি ফল সাজিয়ে রাখা যায়।
  • বড় ফল যেমন- তরমুজ, নারিকেল, বাঙ্গি ইত্যাদি টেবিলের উপর আলাদা আলাদাভাবে সাজিয়ে রাখতে হবে।
  • আমলকি, জলপাই, কামরাঙ্গা, বড়ই ইত্যাদির মতো ছোট ফল ঝুড়িতে করে টেবিলের উপর সাজিয়ে রাখতে হবে।
  • যে সব ফল ওজন হিসেবে বিক্রি করা হয় সেসব ফল বিক্রি করার সময় দাঁড়িপাল্লায় মেপে দিতে হবে।
  • হালি বা ডজন হিসেবে কিছু ফল বিক্রি করা হয়। যেমন- কলা, আপেল, কমলা ইত্যাদি। এসব ফল সঠিকভাবে গুণে দিতে হবে।
  • বিক্রি করা ফল কাগজের ঠোঙ্গায় করে বিক্রেতাকে দিতে হবে।
সাবধানতা
  • টাটকা ও পাকা ফল বিক্রি করতে হবে।
  • ফল সাজিয়ে রাখার আগে ভালো করে মুছে রাখতে হবে।
  • প্রাকৃতিক উপায়ে পাকা ফল দোকানে রাখতে হবে। জাঁক দিয়ে পাকা ফল বিক্রি করা উচিত নয়।
আয় ও লাভের হিসাব
প্রতি সপ্তাহে ৫০০০-৬০০০ টাকার ফল কিনলে সব খরচ বাদ দিয়ে ফল বিক্রয় করে ৭০০০-৮০০০ টাকা আয় করা যায়। এতে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২০০০ টাকা লাভ করা সম্ভব হবে।
আমাদের দেশে সারা বছরই বিভিন্ন ফল জন্মায়। এসব ফলের প্রচুর চাহিদাও থাকে। অল্প পুঁজি নিয়ে যেকোন ব্যক্তি ফলের দোকান দিয়ে স্বাবলম্বী হতে পারেন।
কেস স্টাডি:
সামাজিক বাধাকে অতিক্রম করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠলেন জমিলা
টাঙ্গাইল জেলার গালা গ্রামের জমিলা বেগম। মাত্র ১৩ বছর বয়সে টাঙ্গাইল থানাপাড়ার শাহআলমের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। বিয়ের পর গালা বাজারের পাশে বাড়ি করে সেখানে থাকতেন জমিলা আর তার স্বামী। ১২ বছর আগে জমিলার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে। দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে সে টাঙ্গাইল শহরে চলে যায়। দ্বিতীয় বিয়ের পরও শাহআলম জমিলা বেগমের খোঁজখবর নিত এবং সংসার খরচ দিত। পাঁচ বছর আগে জমিলার বড় মেয়ের বিয়ে হয়। বড় মেয়ের বিয়ের পর থেকে তার স্বামী আর কোনো সংসার খরচ দেয় না, এমনকি যোগাযোগ পর্যন্ত করেন না।
এদিকে স্বামী সংসার খরচ বন্ধ করে দেয়ায় জমিলা দিশেহারা হয়ে পড়েন। যেন এক অথৈ সাগরে পড়েন তিনি। নিজের কোনো আয় নেই, কীভাবে চলবেন তার তিন সন্তান নিয়ে? কীভাবে তুলে দেবেন সন্তানদের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার? কীভাবে চলবে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ? এরকম হাজারও প্রশ্নের সম্মুখীন হন তিনি।
জমিলা জানান, কোন উপায় না দেখে তিনি তার থাকার ঘরটি বিক্রি করে দেন। সেখানে কোনরকমে একটি কুঁড়ে ঘর তুলে ঘর বিক্রির টাকা দিয়ে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ আর সংসার খরচ চালাতে থাকেন। কিছুদিনের মধ্যেই ঘর বিক্রির টাকা শেষ হয়ে যায়। ক্ষুধার জ্বালায় শেষ পর্যন্ত ৬ শতাংশ বসতভিটা থেকে চার শতাংশ বিক্রি করে দেন। দুই শতাংশের মধ্যে একটি কুঁড়ে ঘর তুলে মেয়েদের নিয়ে থাকেন। এ সময় উপায় না দেখে নিজেকে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে উপমা মহিলা উন্নয়ন সংস্থার দলীয় সদস্য হন।
উপমা মহিলা উন্নয়ন সংস্থা গ্রাউরি প্রকল্পের সাহায্যে ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতা নারী সদস্যদের জন্য ‘নারী-পুরুষ সম্পর্ক : ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সৃষ্টি’ প্রশিক্ষণের আয়োজন করে।
তিন দিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণ তার উপার্জনের উপায় খুঁজে বের করতে সহায়ক হয়। প্রশিক্ষণে শেখা ব্যবসা পরিচালনার নিয়মনীতি বিষয়গুলোকে বিবেচনা করে জমিলা জমি বিক্রির কিছু টাকা দিয়ে তার বাড়ির পাশে গালা বাজারে ফলের দোকান দেন। কারণ সে সময় গালা বাজারে তখন কোনো ফলের দোকান ছিল না।
এতে ব্যবসার পাশাপাশি মেয়েদের দেখাশোনা করাটাও সহজ হয়।
এদিকে ব্যবসা শুরু হতে না হতেই বাধা হয়ে দাঁড়ায় সমাজ। পাশের মসজিদের ইমাম এলাকার লোকজন নিয়ে এসে তাকে জানায় বাজারে কোনো মহিলা ব্যবসা করলে এলাকার বউ-ঝিরা নষ্ট হয়ে যাবে। সুতরাং তার বাজারে ব্যবসা করা চলবে না। এসব বাধাকে উপেক্ষা করেন জমিলা। এ ছাড়া সে সময় জমিলার পাশে এসে দাঁড়ান নারীদের ব্যবসার ব্যাপারে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসে সোশ্যাল সাপোর্ট গ্রুপ ও বাজার কমিটি। জমিলার দৃঢ় মনোবল এবং এদের সহযোগিতার কাছে স্থানীয় গোঁড়াপন্থীরা শেষ পর্যন্ত হার মানে। বাজারে দোকান করতে এখন জমিলার আর কোনো বাধা নেই। জমিলা এখন মাসে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা আয় করে। তার বর্তমান পুঁজি এক লাখ টাকার মতো। মেঝ মেয়েকে টাঙ্গাইল শহরে একটি হোস্টেলে রেখে পড়াচ্ছেন আর ছোট মেয়েকে নিজের কাছে রেখেই পড়াচ্ছেন।
জমিলা বলেন, আমার কষ্টের দিন এহেন শেষ। নিজে আয় করি নিজের স্বাধীন মতো খরচ করি। যে স্বামী আমারে আমার অধিকার থিকা বঞ্চিত করছে। তার কথা এহেন আর ভাবি না। এহেন আমারে নিতে চাইলেও সতিনের ঘর করতে আমি আর যাব না।
এলাকার লোকজন বিপদাপদে এখন জমিলাকে ডাকে, সাহায্য চায়। বিভিন্ন রকম পারিবারিক কলহের সে মীমাংসা করে এবং নারীর প্রতি ন্যায়বিচারের জন্য দৃঢ়প্রত্যয়ী হয়ে কাজ করে যাচ্ছে জমিলা।

No comments:

Post a Comment

Thanks For Your Message
এবিসি মেশিনারি লিমিটেড।
Call: 01977886660, 01758631813
মেশিন কেনার জন্য - http://www.abcshopbd.com/

অন্যান্য বিষয় খুজুন-

Post Top Ad