অল্প টাকায় করতে পারেন স্ট্রবেরি চাষ - ব্যবসায়ী আইডিয়া

বিজ্ঞাপন

LightBlog

New

Post Top Ad

Monday, November 9, 2015

অল্প টাকায় করতে পারেন স্ট্রবেরি চাষ


স্ট্রবেরি শীতকালীন দেশের ফল হলেও বর্তমানে বাংলাদেশের যেসব এলাকায় শীত বেশি পড়ে ও অনেক দিন স্থায়ী হয় সেসব এলাকায় বারি স্ট্রবেরি-১ নামে একটি উচ্চফলনশীল জাতের স্ট্রবেরি চাষ করা হচ্ছে। স্ট্রবেরির পাকা ফল টকটকে লাল রঙের হয়। এ ফলটি সুগন্ধিযুক্ত, টক ও মিষ্টি স্বাদের। জমির পাশাপাশি টব, বাড়ির ছাদ বা বারান্দায় এ ফল চাষ করা সম্ভব। আমাদের দেশের অনেক জায়গায় এখন ব্যবসায়িক ভিত্তিতে স্ট্রবেরি চাষ ও বাজারজাত করা হচ্ছে।
স্ট্রবেরি (Fragaria ananasa) হচ্ছে Rosaceae পরিবারভুক্ত একটি গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। স্ট্রবেরি মূলত শীত প্রধান অঞ্চলের ফল। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের যেসব এলাকায় শীত বেশি পড়ে ও বেশি দিন থাকে সেসব এলাকায় বারি স্ট্রবেরি-১ নামে একটি উচ্চফলনশীল জাতের স্ট্রবেরি চাষ করা হচ্ছে। স্ট্রবেরির পাকা ফল টকটকে লাল রঙের হয়। এ ফলটি সুগন্ধীযুক্ত, টক মিষ্টি স্বাদের। জমির পাশাপাশি টব, বাড়ির ছাদ বা বারান্দায় এ ফল চাষ করা সম্ভব। বর্তমানে আমাদের দেশের রাজশাহী, যশোর, শ্রীমঙ্গল, ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ প্রভৃতি জায়গায় ব্যবসায়িক ভিত্তিতে স্ট্রবেরি চাষ ও বাজারজাত করা হচ্ছে। একজন বেকার নারী বা পুরুষ নিজের কর্মসংস্থান ব্যবস্থার জন্য নিজের জমিতে অথবা বর্গা নেওয়া জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করে ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
বাজার সম্ভাবনা
আকর্ষণীয় রঙ, গন্ধ ও উচ্চ পুষ্টিমানের জন্য বর্তমানে স্ট্রবেরি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ফল। ফল হিসেবে সরাসরি খাওয়া ছাড়াও বিভিন্ন খাবারের সৌন্দর্য ও সুগন্ধ বাড়ানোর জন্য এটা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশের বড় বড় শহরগুলোতে স্ট্রবেরির চাহিদা আছে। স্ট্রবেরি বেশি দামে বিক্রি করা যায় তাই এর চাষ খুবই লাভজনক। এছাড়া দেশের চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত উৎপাদন বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সহায়তা দিয়ে থাকে। স্ট্রবেরি বিদেশে রপ্তানি করার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
প্রয়োজনীয় মূলধন
 এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে স্ট্রবেরি চাষের জন্য প্রায় ৬০০০০ টাকার প্রয়োজন হবে। যদি ব্যক্তিগত পূঁজি না থাকে তাহলে মূলধন সংগ্রহের জন্য নিকট আত্মীয়স্বজন, ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এসব সরকারি ও বেসরকারি ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দিয়ে থাকে।
ব্যাংকঃ
সোনালী ব্যাংকঃ http://www.sonalibank.com.bd/
জনতা ব্যাংকঃ http://www.janatabank-bd.com/
রূপালী ব্যাংকঃ http://www.rupalibank.org/rblnew/
অগ্রণী ব্যাংকঃ http://www.agranibank.org/
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকঃ www.krishibank.org.bd/
এনজিও
আশাঃ http://asa.org.bd/
গ্রামীণ ব্যাংকঃ http://www.grameen-info.org/
ব্রাকঃ http://www.brac.net/
প্রশিকাঃ http://www.proshika.org/
আয়-ব্যয় ও লাভের হিসাব
স্ট্রবেরি উৎপাদন খরচ   
১বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে ফসল উৎপাদন খরচ
খরচের খাত
পরিমাণ
আনুমানিক মূল্য (টাকা)
বীজ/চারা
৪০০০টি
৪০০০০
জমি তৈরি
চাষ ও মাদা তৈরি
১৫০০
পানি সেচ
৪টি
১০০০
শ্রমিক
৩০ জন
৪৫০০
সার
প্রয়োজন অনুসারে জৈব সার

এই সার বাড়িতেই তৈরি করা সম্ভব। তাই এর জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন নেই।
বিকল্প হিসেবে
টিএসপি=২৭ কেজি (১ কেজি=২৩ টাকা)
ইউরিয়া=৩৪ কেজি (১ কেজি=১৫ টাকা)
এমপি=৩০ কেজি (১ কেজি=২৮ টাকা)
জিপসাম=২০ কেজি (১ কেজি=১২ টাকা)
জিংক সালফেট=৩৩৫ গ্রাম (১ কেজি=৮০ টাকা)


২২৫০
কীটনাশক
প্রয়োজন অনুসারে জৈব বা রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার
নিজস্ব/দোকান
জমি ভাড়া
একবছর
৪০০০
মাটির জৈব গুণাগুণ রক্ষা ও উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য জৈব সার ও জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে লাভের পরিমাণ বাড়তে পারে।
আয় ও লাভ
প্রতি গাছে ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম বারি স্ট্রবেরি-১ জন্মালে প্রতিবিঘা থেকে প্রায় ১.৫ থেকে ২ টন ফল পাওয়া সম্ভব।
প্রতি কেজি যদি গড়ে ৫০০.০০ টাকা দরে বিক্রি করা হয় তাহলে মোট আয় হবে:
১৫০০×৫০০ = ৭,৫০,০০০ টাকা (প্রতিবিঘা)।
সুতরাং সম্ভাব্য নীট লাভ হবেঃ
৭,৫০,০০০- ৫৩,২৫০ = ৬,৯৬,৭৫০.০০ টাকা
পুষ্টিমান
স্ট্রবেরি অত্যন্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ একটি ফল। এতে পানি, খাদ্যশক্তি, আমিষ, চর্বি, শর্করা, অশোধিত আঁশ, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ভিটামিন-সি, নিয়াসিন ও ভিটামিন-এ আছে।
স্ট্রবেরি উৎপাদন কৌশল
বারি স্ট্রবেরি-১ এর বৈশিষ্ট্য
১. বারি স্ট্রবেরি-১ বাংলাদেশের সব জায়গায় চাষ করার উপযোগী একটি উচ্চফলনশীল জাত।
২. সাধারণত গাছের গড় উচ্চতা ৩০ সে.মি. এবং বিস্তার ৪৫-৫০ সে.মি. হয়ে থাকে। 
৩. সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রোপণ করা হলে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে গাছে ফুল আসতে শুরু করে এবং ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। 
৪. প্রতি গাছে গড়ে ৩২টি ফল হয়, যার গড় ওজন ৪৫০ গ্রাম। প্রতি বিঘায় ফলন ১.৫-২ টন। 
৫. ফল দেখতে ছোট ও মাঝারি আকারের হয়ে থাকে। 
৬. পাকা ফল আকর্ষণীয় টকটকে লাল রঙের। ফলের ত্বক নরম ও কিছুটা খসখসে। ফল সম্পূর্ণরূপে খাওয়া  যায়। 
৭. স্ট্রবেরির জাতটি যথেষ্ট পরিমাণ সরু লতা (runner) ও চারা উৎপাদন করে তাই এর বংশবিস্তার সহজ।
চাষের উপযোগী পরিবেশ ও মাটি
মাটির প্রকৃতি
জলবায়ু
তাপমাত্রা
দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি
ভাদ্র থেকে আশ্বিণ মাস (মধ্য আগস্ট থেকে মধ্য অক্টোবর)
দিন ও রাতে যথাক্রমে ২০-২৬º ও ১২-১৬º সে.
চারা উৎপাদন
১. স্ট্রবেরি সরু লতার মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে থাকে। তাই আগের বছরের গাছ নষ্ট না করে জমি থেকে তুলে জৈব পদার্থ আছে সেরকম হালকা ছায়াযুক্ত জায়গায় রোপণ করতে হবে। 
২. ওই গাছ থেকে উৎপন্ন রানারে যখন শেকড় বের হবে, তখন তা কেটে ভালোভাবে মেশানো গোবর মাটি দিয়ে ভরা পলিথিন ব্যাগে (৪"X৩") লাগাতে হবে এবং তা হালকা ছায়াযুক্ত নার্সারিতে সংরক্ষণ করতে হবে। 
৩. অতিরিক্ত বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য বর্ষা মৌসুমে চারার ওপর পলিথিনের ছাউনি দিতে হবে। 
৪. রানারের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করা হলে স্ট্রবেরির ফলন ক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে। তাই ফলন ক্ষমতা ঠিক রাখার জন্য তিন বছর পরপর টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদিত চারা ব্যবহার করা ভালো।
জমি তৈরি 
১. স্ট্রবেরি উৎপাদনের জন্য কয়েকবার চাষ ও মই দিয়ে ভালোভাবে জমি তৈরি করতে হবে।
২. আগাছা বিশেষ করে বহু বর্ষজীবী আগাছা জমি থেকে উঠিয়ে ফেলতে হবে।
চারা রোপণ 
১. চারা রোপণের জন্য বেড পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। এ জন্য এক মিটার চওড়া এবং ১৫-২০ সে.মি. উঁচু বেড তৈরি করতে হবে। দুটি বেডের মাঝে ৫০ সে.মি. নালা রাখতে হবে। 
২. প্রতি বেডে ৫০ সে.মি. দূরত্বে দুই সারিতে ৫০ সে.মি. দূরে দূরে চারা রোপণ করতে হবে।
সার প্রয়োগ
কৃষকদের মতে গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে স্ট্রবেরি চাষের জমিতে যতটুকুসম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরণ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই ভালো থাকবে। বাড়িতে গবাদি পশু থাকলে সেখান থেকে গোবর সংগ্রহ করা যাবে। নিজের গবাদি পশু না থাকলে পাড়া-প্রতিবেশি যারা গবাদি পশু পালন করে তাদের কাছ থেকে গোবর সংগ্রহ করা যেতে পারে। এছাড়া ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে আবর্জনা পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির আশে-পাশে গর্ত করে সেখানে আবর্জনা, ঝরা পাতা ইত্যাদি স্তুপ করে রেখে আবর্জনা পচা সার তৈরি করা সম্ভব।
পানি সেচ ও নিষ্কাশন 
১. স্ট্রবেরি চাষে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। জমিতে রসের অভাব দেখা দিলে পর্যাপ্ত পানি সেচ দিতে হবে। 
২. স্ট্রবেরি জলাবদ্ধতা মোটেই সহ্য করতে পারে না। তাই বৃষ্টি বা সেচের অতিরিক্ত পানি দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
রোগবালাই
১. কোন কোন সময়, বিশেষ করে বেশি কুয়াশা পড়লে পাতায় বাদামি রঙের দাগ দেখা যায়। এ রোগের আক্রমণ হলে ফলন এবং ফলের গুণগত মান কমে যায়।
২. ফল পচা রোগের আক্রমণে ফলের গায়ে জলে ভেজা বাদামি বা কালো দাগের সৃষ্টি হয়। দাগ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং ফল খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে যায়।
৩. ভারটিসিলিয়াম উইল্ট রোগে আক্রান্ত গাছ হঠাৎ করে দূর্বল ও বিবর্ণ হয়ে যায়। আক্রমণ বেশি হলে গাছ বাদামি বর্ণ হয়ে মারা যায়। সাধারণত জলাবদ্ধ জমিতে এ রোগের আক্রমণ বেশি হয়।
৪. ভাইরাস রোগের আক্রমণে স্ট্রবেরির ফলন ক্ষমতা এবং গুণগতমান কমে যেতে থাকে। সাদা মাছি পোকা এ ভাইরাস রোগ ছড়ায়।
প্রতিকার
স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে পোকা দমন না হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি অফিসে পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করা যেতে পারে।
চাষের সময়ে পরিচর্যা
১. সরাসরি মাটির সংস্পর্শে এলে স্ট্রবেরির ফল পচে নষ্ট হয়ে যায়। এ জন্য চারা রোপণের ২০-২৫ দিন পর স্ট্রবেরির বেড খড় বা কাল পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। 
২. খড়ে যাতে উইপোকার আক্রমণ না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। জমি সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
৩. গাছের গোড়া থেকে নিয়মিতভাবে রানার বের হয়, যা ফল উৎপাদনে বাধা দেয়। এজন্য ওই রানারগুলো নিয়মিত কেটে ফেলতে হবে। রানার কেটে না ফেললে গাছের ফুল ও ফল উৎপাদন দেরিতে হয় এবং কমে যায়।
মাতৃগাছ রক্ষণাবেক্ষণ 
১. স্ট্রবেরির গাছ কড়া সূর্যের তাপ এবং ভারি বর্ষণ সহ্য করতে পারে না। এজন্য মার্চ-এপ্রিল মাসে হালকা ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে। নতুবা ফল তোলার পর মাতৃগাছ তুলে টবে রোপণ করে ছায়ায় রাখতে হবে।
২. ফল তোলা শেষ হওয়ার পর সুস্থ-সবল গাছ তুলে পলিথিন ছাউনির নিচে রোপণ করলে মাতৃ গাছ থেকে উৎপাদিত রানার পরবর্তী সময়ে চারা হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
ফল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ 
১. ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে (সেপ্টেম্বর প্রথম সপ্তাহে) রোপণকৃত বারি স্ট্রবেরি-১ এর ফল সংগ্রহ পৌষ মাস থেকে শুরু হয় এবং ফাল্গুন মাস পর্যন্ত (ডিসেম্বর থেকে মার্চ) চলে। 
২. ফল পেকে লাল রঙ হলে ফল সংগ্রহ করতে হবে। 
৩. স্ট্রবেরির সংরক্ষণ কাল খুবই কম তাই ফল সংগ্রহের পরপর তা টিস্যু পেপার দিয়ে মুড়িয়ে প্লাস্টিকের ঝুড়ি বা ডিমের ট্রেতে এমনভাবে রাখতে হবে যাতে ফল গাদাগাদি অবস্থায় না থাকে।
৪. ফল সংগ্রহের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাজারজাত করতে হবে। স্ট্রবেরি সংরক্ষণ গুণ ও পরিবহন সহিষ্ণুতা কম হওয়ায় বড় বড় শহরের কাছাকাছি এর চাষ করা উত্তম।
উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ
প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৭ হাজার চারা রোপণ করা যায়। প্রতি গাছে ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম বারি স্ট্রবেরি-১ জন্মালে প্রতিবিঘা থেকে প্রায় ১.৫ থেকে ২ টন ফল পাওয়া সম্ভব।
সাবধানতা
পাখি, বিশেষ করে বুলবুলি ও শালিক স্ট্রবেরি ফলের সবচেয়ে বড় শত্রু। ফল আসার পর সম্পূর্ণ পাকার আগেই পাখির উপদ্রব শুরু হয়। ফুল আসার পর সম্পূর্ণ বেড জাল দিয়ে ঢেকে দিতে হবে যাতে পাখি ফল খেতে না পারে।
প্রশিক্ষণ
স্ট্রবেরি চাষ করার আগে অভিজ্ঞ কারও কাছ থেকে এ সম্পর্কে খুঁটিনাটি জেনে নিতে হবে। এছাড়া চাষ সংক্রান্ত কোন তথ্য জানতে হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ  করা যেতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্ধারিত ফি-এর বিনিময়ে কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
স্ট্রবেরি একটি পুষ্টিকর ফল। আমাদের দেশের বড় বড় শহরগুলোতে স্ট্রবেরির অনেক চাহিদা আছে। তাই স্ট্রবেরি চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি অতিরিক্ত উৎপাদন বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করা সম্ভব।
কিছু উল্লেখযোগ্য কেস স্টাডি
বান্দরবানে জুম চাষের স্থান দখলে নিচ্ছে স্ট্রবেরি
স্ট্রবেরি গাছের পরিচর্যা করছেন আদিবাসী মাচিং নু
বান্দরবানের আদিবাসী মাচিং নু মার্মা জেলায় প্রথম স্ট্রবেরি চাষ করে নিজের ভাগ্য বদলের পাশাপাশি অনেকের ভাগ্য বদলের কাজ করে যাচ্ছেন। এ জন্য পুরস্কারও পেয়েছেন।
স্ট্রবেরি খুব সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল হওয়ায় এবং ব্যাপক চাহিদা থাকায় এখন পাহাড়ের গতানুগতিক জুম চাষের বদলে মাচিং নুর দেখাদেখি বর্তমানে অনেক আদিবাসী বেছে নিচ্ছেন স্ট্রবেরি চাষ। বান্দরবান সদর উপজেলার ডলুপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে এ চাষাবাদ। তার হাত ধরেই পাহাড়ের গতানুগতিক জুম চাষাবাদ ছেড়ে অনেকে নেমে পড়েছেন স্ট্রবেরি চাষাবাদে।
স্ট্রবেরি চাষে সাফল্যের কথা জানতে চাইলে মাচিং নু জানান, ২০১১ সাল থেকে তিনি চাষ করছেন। রাঙামাটির মানিকছড়ির কৃষি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মাত্র ৩৬টি চারা এনে ২০ শতক জায়গার ওপর চাষাবাদ শুরু করেন। প্রথম বছরে মাত্র ১০ হাজার টাকা খরচ করে লাভ করেন দেড় লাখ টাকা।
মাচিং নু জানান, চলতি বছর তিনি জেলা সদরের আদিবাসীপল্লি কিবুকপাড়া, ডলুপাড়া ও বালাঘাটায় পাঁচটি জায়গায় চাষাবাদ করছেন। আর এ কাজে শ্রমিক হিসেবে প্রতিদিন কাজ করেন পাঁচ আদিবাসী।
মাচিং নু মার্মার স্বামী এ্যানি মং মার্মা বলেন, একটি চারা থেকে ২৫০ গ্রামের বেশি স্ট্রবেরি পাওয়া যায় এবং এক একর ভূমিতে ২০ হাজার চারা লাগানো যায়। স্ট্রবেরির পাশাপাশি তিনি একই জমিতে ‘ক্যাপসিকাম’ নামের সবজির চাষ করছেন।
অক্টোবরে চারা রোপণ করলে মার্চ পর্যন্ত স্ট্রবেরি পাওয়া যায়। পানি আর সার দিয়ে পরিচর্যা করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। পাহাড়ের জুম চাষাবাদের মতো স্ট্রবেরি চাষাবাদে তেমন কষ্ট না থাকায় স্থানীয় আদিবাসীরা এ চাষাবাদে এগিয়ে এলে শ্রমের তুলনায় অধিক মুনাফা অর্জন করতে পারবেন বলে মনে করছেন অনেকে।
কিবুকপাড়ার আরেক স্ট্রবেরি চাষি উ চিং মং মার্মা বলেন, ‘আমাদের এই বোন (মাচিং নু) এখন এলাকার সবাইকে এই চাষাবাদের পদ্ধতি শিখিয়ে চাষাবাদে উৎসাহ প্রদান করছেন।’
বর্তমানে বান্দরবানের বাজারে সাড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে স্ট্রবেরি। প্রচুর স্ট্রবেরি উৎপন্ন হলেও এর কোনো পাইকারি বাজার বা পাইকার না থাকায় তাকে প্রতিদিন জেলা শহরে স্ট্রবেরি সরবরাহ করতে হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আবুল কালম বলেন, ‘স্ট্রবেরি জেলার জন্য নতুন ফল। যদি মাটি ও আবহাওয়ার অনুকূলে থাকে, তাহলে আমরা উৎসাহ দেব।’

সংগৃহীত ও সংকলিত
তথ্য: 
তথ্য আপা

No comments:

Post a Comment

Thanks For Your Message
এবিসি মেশিনারি লিমিটেড।
Call: 01977886660, 01758631813
মেশিন কেনার জন্য - http://www.abcshopbd.com/

অন্যান্য বিষয় খুজুন-

Post Top Ad